,

যানবাহনে আবারও বাধ্যতামূলক হচ্ছে বীমা

সময় ডেস্ক : যানবাহনের বীমা ফের বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে তৃতীয়পক্ষের বীমা তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যানবাহনের বীমা ছেড়ে দেওয়া হয় মালিকের ইচ্ছার ওপর। অর্থাৎ একজন ইচ্ছা করলে তার যানবাহনের বীমা করতে পারেন, আবার না করলেও কোনো সমস্যা নেই।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, মোটরযান মালিককে বীমা করতে হবে বলে একটি ধারা যোগ করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী মোটরযান মালিককে যথা নিয়মে বীমা করতে হবে। বীমা না করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে তৃতীয়পক্ষের বিমা তুলে দেওয়া হয় এবং যানবাহনের বিমার বিষয়টি মালিকের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। এখন তাহলে মালিকরা যানবাহনের কোনো ধরনের বীমা করবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কোনো উত্তর দেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিকে যানবাহনের বীমা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইনে আরও কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, ১২টি ধারায় বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমানো হয়েছে। বেশিরভাগই আর্থিক জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে। আগে তিনটি ধারায় অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হলেও সেখানে এখন একটি ধারা অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কারিগরি নির্দেশ না মানলে এতদিন ৩ বছর জেল দেওয়ার বিধান ছিল। এই অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা ওভারলোডভাবে গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা হলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এখন শুধু দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন করা হয় জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।’
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত সংক্রান্ত অপরাধ করলে এতদিন ২ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটিকে কমিয়ে ২ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। লাইসেন্স বাতিলের পরেও যানবাহন চালালে বর্তমান আইনে ৩ মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এখন তা কমিয়ে ৩ মাস জেল ও ১৫ হাজার হাজার টাকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া কনডাক্টরের দায়িত্ব পালন করলে ১ মাস কারাদণ্ড, ৫ হাজার জরিমানার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারায় এখন কনডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজর শব্দটি যোগ করা হয়েছে। ভাড়ার চার্ট না দেখালে বা বেশি ভাড়া নিলে এতদিন ১ মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। দুটো অপরাধ একসঙ্গে করলে এতদিন এই শাস্তি দেওয়া হতো। এখন চার্ট প্রদর্শন না করলে বা বেশি ভাড়া দাবি করলে এই সাজা দেওয়া হবে।’
মিটার টেম্পারিং করলে ৬ মাসের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতো। এখন এই অপরাধের জন্য ৩ মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে, সঙ্গে ১ পয়েন্ট কাটা যাবে- বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত হারের থেকে টার্মিনাল চার্জ বেশি নিলে তা চাঁদাবাজি হিসেবে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী ট্র্যাফিক সাইন ও সংকেত না মানলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এখন জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হতো। এখন সেটিকে বদলে ১ বছর জেল, ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা যাবে। পরিবেশ দূষণকারী মোটরযান চালালে ৩ মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এটিকে কমিয়ে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করালে বর্তমান আইনে ৫ হাজার জরিমানার সঙ্গে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা হতো। এটিকে বদলে শুধু ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। কী অবস্থায়, কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে সেই নির্দেশনা অমান্য করলে এতদিন ৩ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। সেটিকে বদলে ১ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর