সময় ডেস্ক ॥ এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ওঠে ক্রিকেট বিশ্বে। এরপর আইসিসি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল বক্তব্য রাখেন যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এমনকি ভারত ও বাংলাদেশ ম্যাচের দুই রেফারি আলিম দাদ ও ইয়াং গোল্ড আইসিসি সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা করবেন এমন হুমকি দেন। সবশেষে রোববার অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার পর মাঠে যখন খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হচ্ছিল তখন মঞ্চে আইসিসি সভাপতিকে দেখা গেল না। তাকে আমন্ত্রণই জানাতে ভুলে গেছে অভিজাত ক্রিকেটের আয়োজক আইসিসি কর্তৃপক্ষ। অথচ মোস্তফা কামাল এখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নেই অবস্থান করছেন। তাই মুখ খুললেন আ হ ম মোস্তফা কামাল। এর আগে ১৯ শে মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ভারতের সাথে বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত ম্যাচে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ ভারতের কাছে ৯৫ রানে পরাজিত হয়। তখন আইসিসির সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল পদত্যাগের কথাও বলেছিলেন। কিন্তু পদত্যাগ করেননি। করলে হয়ত এখন তিনি সন্মান নিয়েই থাকতে পারতেন। এখন আ হ ম মোস্তফা কামাল বলছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত বাংলাদেশের ম্যাচে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিন্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ হেরে যায়। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি থাকতেও আম্পায়ারা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা নিয়ে আমাকে আইসিসির সাথে বসতে হবে। এবং এ বিষয়ে আমাকে অনেক কাজ করতে হবে। আইসিসি’র সংবিধান এ যাবত পাঁচবার লঙ্গন হয়েছে। সংবিধান যখন লঙ্ঘিত হয়, তখন এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। এ সুতরাং আমি মনে করি, ক্রিকেটকে এ জায়গা থেকে মুক্ত করতে হবে। এ জায়গা থেকে ক্রিকেটকে মুক্ত করার জন্য আমি লড়ছি এবং লড়ব। রোববার অস্ট্রেলিয়ার মেলর্বোনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১৫ এর ফাইনাল ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা যদিও সেদিন ভারতের কাছে হারতাম। কিন্তু আমরা দেখতে চেয়েছিলাম ভারতের সাথে লড়াই করার জন্য আমাদের শক্তি কতটুকু আছে। আমি কখনই ভারতের বিপক্ষে কথা বলিনি। ভারতের বিরুদ্ধে আমি নই। যদিও আমাকে বলা হয়েছে আমি নাকি বলেছি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল এবং আইসিসি এক হয়ে গিয়েছে। ভারতের সাথে এরকম ঘটনার ফলে আমরা বিশ্বের দরবারে নন্দিত হব। আর তারা হবে নিন্দিত। আমি মনে করি, আমাদের ক্রিকেট দল আরো এগিয়ে যাবে। আইসিসি সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বকাপের ট্রফি মঞ্চে উপস্থিত না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই ওরা চেয়েছিল, আমি যেন মঞ্চে না উঠি। ওটা ওদের পরিকল্পনাই ছিল। আমার বিপক্ষে একটা কারণ পেয়েই সেটা এদিন ব্যবহার করেছে। মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখানে গঠনতন্ত্র লঙ্গন করা হয়েছে। আমি সত্যিই হতাশ। বাংলাদেশে ফিরেই এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে নিজের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি আবারও বলব, সেদিন দেশের পক্ষে এবং ক্রিকেটের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমি ভারতের বিপক্ষে নই। হয়তো সেদিন ভারতের সঙ্গে হারতাম। কিন্তু আমি ক্রিকেটের আসল মেজাজ উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের আসল শক্তি দেখতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমি তার পক্ষেই লড়েছি। আমি ভারতের বিপক্ষে কোনও কথা বলিনি। আমার কথাগুলো ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে আইসিসি আর ভারত এক হয়ে গেছে। আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মাঠে অনেক প্ল্যাকার্ড ছিল, যেখানে লেখা ‘ইন্টরন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বিকাম ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বলা হয়েছিল, আপনারা যা দেখেছেন, আমিও তাই দেখেছি। এর উত্তরেই তখন বলেছিলাম, আমি তো আইসিসির সভাপতি, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি নই। আর তাই যদি হয়, তাহলে আমার পদত্যাগ করা উচিত, আমি সেটাই বলেছি। এর মানে এই নয়, আমি ভারতের বিপক্ষে কথা বলেছি। কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকাই জানিয়েছিল, বিশ্বকাপে ট্রফি বিতরণ মঞ্চে থাকছেন না আইসিসি সভাপতি । শেষ পর্যন্ত ফাইনালের পরই দেখা গেল আইসিসির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ক্লার্কদের ট্রফি তুলে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি ও আইসিসি চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। আইসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইসিসি সভাপতি মোস্তফা কামালেরই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার এই টুর্নামেন্টের ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা। তবে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান পদ তৈরি করে তাকেই সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়। সভাপতির পদটি হয়ে থাকে শুধু সম্মানসূচক। উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ ট্রফি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং শচীন টেন্ডুলকার।
Leave a Reply