,

মন্তব্য প্রতিবেদন বিবিয়ানা গ্যাস আন্দোলনের অকাল মৃত্যু চাই না…?

এম.এ আহমদ আজাদ ॥ নবীগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস চাই দাবি নিয়ে সর্বদলীয় আন্দোলন নিয়ে দুটি কথা। এআন্দোলনটি ছিল সবার কাছে গ্রহনযোগ্য। এই গনদাবির মঞ্চে কোন রাজনৈতিক রঙ্গ ছিল না। সবদলের ও পেশার সবাই একই মঞ্চে ছিলেন, এই নাগরিক দাবি বাস্তবায়নের জন্য। রাজনৈতিক ভাবে একে অন্যের বৈরী থাকলেও এই আন্দোলনে সবাই ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। পূর্বে বিবিয়ানার গ্যাস আন্দোলন নিয়ে বির্তক হলেও এবার এই আন্দোলন ছিল ব্যতিক্রম। এবার রাঘববোয়ালদের কাছে থেকে আন্দোলন শুরু হয়নি। এই আন্দোলনের সুত্রপাত হয়েছিল তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে থেকে তাই আন্দোলনটি জমে উঠেছিল। অনেকেই আন্দোলন কে কানসার্টের সাথে তুলনা করে ছিলেন গন জাগরণ দেখে। লন্ডন- বাংলা- মধ্যপ্যাচ্যে নবীগঞ্জের প্রবাসীরা দাবিটি আদায়ের জন্য আন্দোলন কমিটি গঠন করেন। এক সাথে আন্দোলন জমে উঠে প্রবাস বাংলায়। একপর্যায়ে হঠাৎ করে এই আন্দোলনের সাথে নবীগঞ্জের সব জন প্রতিনিধিরা একাত্বতা প্রকাশ করেন। নতুন গতি আর নতূন রঙ্গ পায় আন্দোলনের শুরুতে। আন্দোলন উত্তাল গতি ধারন করে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিলে পালন করেন নানা কর্মসূচী। মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ, অনশন, হরতাল সবই পালন হয় সফল ভাবে। সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই আন্দোলনটি ছিল নবীগঞ্জের জনতার প্রানের দাবি। দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা কে ঘিরেই এই আন্দোলনের সুত্রপাত হয়। এর আগে অবশ্য কয়েক বার আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। নানা কারনে সেই আন্দোলন থেমে যায়। গতি হারিয়ে সেই আন্দোলন আর আলোর পথ দেখেনি। কিন্তু নাগরিক সমাজের ব্যানারে এই আন্দোলনটি নিয়ে সবাই আশায় বুক বাঁধেন। এই আন্দোলন শুধু মাঠ পর্যায়ে নয়। একদল তরুন কর্মী ফেইসবুক আর টুইটারের একাউন্টে গরম করে তুলেন বিবিয়ানার গ্যাস আন্দোলনের দাবি নিয়ে আলোচিত নানা রকম স্ট্যাটাস দিয়ে। ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন গ্যাস আন্দোলনের বর্ননা দিয়ে নানা রকম স্ট্যাটাস নিয়ে ভরপুর থাকতো। পজেটিভ আর নেগেটিভ কমেন্টস পড়তো এসব লেখায়। আউশকান্দি সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যাপ্তি যখন সারা নবীগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে তখন কি হচ্ছে কি হবে সেটাই ছিল জনতার কৌতুহল। এই আন্দোলন উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আউশকান্দি হীরাগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুরশেদ আহমদ ও লন্ডন প্রবাসী মুহিবুর রহমান হারুন। তারা দায়িত্ব নিয়ে যখন আন্দোলন মাঠে জমে উঠে তখন কমিটির সভাপতি লন্ডন প্রবাসী মুহিবুর রহমান হারুন লন্ডন চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে আর দেশে ফিরে আসেননি। এদিকে দেশে মুরশেদ ভাই একাই কয়েকজন তরুনকে নিয়ে আন্দোলনের হাল ধরেন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী আব্দুল মুকিত, ছাত্রনেতা শিহাব আহমদ ও মুরব্বি শাহানুর আলমসহ আমরা কয়েকজন তাকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করি। আন্দোলনের সাথে একসময় একমত পোষন করেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। তারাও নাগরিক দাবির প্রতি সম্মান দেখান। আন্দোলনে নবীগঞ্জের সব শ্রেনীর লোকজন অংশ নেন। আর জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিদিনের শিরোনাম ছিল বিবিয়ানা আন্দোলন। এদিকে বিশেষ করে লন্ডন প্রবাসীরা এই আন্দোলনে সারা দেন উল্লেখযোগ্য ভাবে। তারা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে এই আন্দোলনের সফল সমাপ্তি চান। কিন্তু দেশের বৈরী রাজনৈতিক হাওয়ার সাথে যেন হঠাৎ আন্দোলনের শ্র“তে ভাটা পড়ে। সবাই কেন যেন নিরবতা পালন করছেন। আমার বিশ্বাস আমাদের নবীগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস চাই আন্দোলনটি কোন রহস্যজনক কারনে নিরব হয়নি। সবাই ক্লান্তি দূর করে আবারো সক্রিয় হতে হবে। আন্দোলন কমিটিতে যারা আছেন সবাই আন্তরিক হলে আবারো জেগে উঠবে জনতা। কিন্তু অকালে যদি সুন্দর একটি নাগরিক আন্দোলনকে মাটিচাপা দেন, তাহলে জনতার আদালতে দায়ি থাকবেন সবাই। কিন্তু একটা ভাল উদ্দ্যোগের অভাবে সুন্দর একটা আন্দোলন সফলতার মুখ দেখার আগেই মৃত্যুবরন করতে পারে না। কেন এই আন্দোলন জেগে উঠবে না এই প্রশ্ন এখন সবার কাছে। যে আন্দোলনটিকে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছেন…. এলাকাবাসীর দাবি যুক্তি সঙ্গত। যে এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুত উৎপাদন তাদের একটি অংশদারিত্ব থাকে। তাই আমাদের বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট আছে যেহেতু আমাদের যুক্তিসঙ্গত দাবি ও পাওয়ার অংশিদারিত্ব আছে..! আমি দাবি জানাবো দেশে বিদেশে যারা এই আন্দোলনকে নিয়ে সক্রিয় ছিলেন তারা আবারো জেগে উঠবেন। অনেকেই আমাকে এই আন্দোলন নিয়ে লেখার অনুরোধ করেছেন। সবাই যখন এই গনদাবি আদায়ে ঐক্যমত আমাদের সাংবাদিক সমাজের দ্বিমত নেই। নবীগঞ্জের সাংবাদিকরা সব সময়ই এই আন্দোলন নিয়ে সক্রিয় ছিলেন এখনও আছেন। নবীগঞ্জের সাংবাদিক সমাজের আপোষহীন লেখার জন্য একদিন সফলতার মূখ দেখবে। এইদাবি নিয়ে একটি কথাই বলবো “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে” তাই নবীগঞ্জের দাবিটিও ঘুমিয়ে জনতার অন্তরে এটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে আমাদেরকে। এছাড়া আমাদের নবীগঞ্জের ১৩ জন ইউপি চেয়াম্যান, নবীগঞ্জ পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য সবাই মিলে আইন শৃংখলা ও স্বমন্বয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয় সহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে পাঠান। নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকার সংসদ সদস্য এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী একাধিকবার আমাদের নাগরিক দাবিটি জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন। সব জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এই দাবি নিয়ে ঐক্য থাকার পরেও কেন আমরা এই আন্দোলনকে জাগিয়ে তুলতে পারছি না একবার ভেবে দেখুন নবীগঞ্জের সুশীল সমাজ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.