,

পাকিস্তাানি সাবেক ক্রিকেটারের বাংলাদেশ নিয়ে আত্মসমালোচনা

সময় ডেস্ক : তিক্ত হলেও সত্য, আমরা বাংলাদেশি ভাইদের প্রাপ্য সম্মান কখনোই দিতে পারিনি। তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়েও ব্যর্থ হয়েছি। বাংলাদেশিদের নিয়ে সব সময় আমরা হাসাহাসি করেছি। আর বড় বানিয়েছি নিজেদের। এই বাস্তবতায় কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশিরা পাকিস্তানকে শুধু ভালোবাসে না বরং পাকিস্তান সৃষ্টিতে তাদের হাত রয়েছে। পাকিস্তান আন্দোলনে খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীদের মতো বীর আমাদের পথ দেখিয়েছে। কিন্তু সেই মুহব্বত, আত্মত্যাগ ও বিশ্বস্ততার মূল্য দেয়ার মানসিকতা পাকিস্তানের রয়েছে বলে বিশ্বাস হয় না। আমরা বাংলাদেশিদের কোনো বিষয় নিয়েই প্রশংসা করতে পারি না। কথায় কথায় তাদের পেছনে ফেলে দেই। তাদের সম্মান, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে কখনোই স্বীকার করিনা। কখনো ইচ্ছেও করিনা। অথচ আমাদের চির শক্র ভারতের বেলায় আমরা কত নমনীয়। ভারতের ফিল্মস্টারদের ছবি আমরা ঘরের দরজায় টানিয়ে রাখি, বিয়ের আসরে তাদের গান ছেড়ে নাচি, তাদের পোশাক দেখে আমরা ফ্যাশন করি, অথচ আইপিলে তারা আমাদের ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগও দেয় না। আবার দেখা যায় পাকিস্তানে যখন ভারতীয় ক্রিকেটার আসে আমরা তাদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই। হাত পায়ে অন্যকরম জোস হাজির হয়। কিন্তু বাঙালি ভাইদের থেকে দশ হাত দূরে থাকি। বড়ই আশ্চর্য। আমরা বাঙালিদের ভাষা থেকে শুরু করে সব বিষয়ই হাস্যকর বানিয়ে তুলেছি। কখনো যদি কোনো বাঙালির দেখা পাই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মুখে হাসি উপচে উঠে। তার উদ্দেশে বলতে শুরু করি ‘তুম বাঙালি হো’? বাঙালিদের বিষয়ে আমরা একটা ধারণা পাকাপোক্ত করে ফেলেছি, তারা কেবল টুপি বানায়, গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়ায়, মাছ আর ভাত খায়। বড়জোর হোটেলের বাবুর্চি হয়। আমরা তাদের অর্থনীতিকেও হাসির পাত্র বানিয়েছি। তাদের দেখছি নিকৃষ্ট দৃষ্টিতে। পাকিস্তানে যে এলাকায় বাঙালিরা থাকে সেটা নিয়েও আমরা ঠাট্টায় মশগুল। সেটাকে বাঙালি পাড়া বানিয়েছি আমরা। আমরা এগুলো নিয়ে মজা করছি আর দিন দিন নির্বোধের গোলাম হচ্ছি। অন্যদিকে আমাদের বাঙালি ভাইরা ধীরে ধীরে কষ্ট মেহনত ও দেশপ্রেমে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। বাংলাদেশ আজ তৃতীয় বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশ হতে চলেছে। তাদের শক্তিশালী দেশগুলোর কাতারে গুণতে শুরু করেছে বিশ্ব। এটাও এখন তিক্ত বাস্তবতা যে, শঙ্কট-শঙ্কায় আমাদের টেক্সটাইল ব্যবসা এখন বাংলাদেশের দিকে শিফট করতে শুরু করেছে। আর বাংলাদেশ এখন বিশ্বের টেক্সটাইল ব্যবসার দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ হয়ে গেছে। এর থেকে বছরে বাংলাদেশের আয় ২৭ বিলিয়ন ডলার। এসব নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া যেখানে পাকিস্তানকে খুঁজেই পাচ্ছে না সেখানে বাংলাদেশ আকাশের তারকার মতো জ্বলজ্বল করছে। শিক্ষাখাতেও বাংলাদেশ পাকিক্ষান থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ২০১৪ সালের বাজেটের ১৪ থেকে ১৯ ভাগ ব্যয় করেছে শিক্ষায়। সেখানে পাকিস্তান খরচ করেছে মাত্র ২ ভাগ। আমরা যে রাষ্ট্রের সূচনা থেকেই মজা করে আসছি, তারা ধীরে ধীরে আমাদের টেক্কা দিয়ে উদাহরণ তৈরি করে যাচ্ছে। আমাদের এক ডলার কিনতে লাগে ১০২ রুপি অথচ বাংলাদেশের ৭৮ টাকাতেই এক ডলার পাওয়া যায়। বাংলাদেশ পাকিস্তান তুলনাটা এখানে শেষ করা যেত কিন্তু বিষয়টা যে অনেক লম্বা। বাংলাদেশের কাছে দুধ ও মধুর নহর রয়েছে। আর তাদের অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের গর্ব করার রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটা হলো ক্রিকেট। আমরা যেটি নিয়ে এতদিন হাসাহাসি করেছি। সেটা দিয়ে তারা আজ আমাদের মুখে পর্দা সেঁটে দিয়েছে। হাসি আর কটূক্তির জবাব দিয়ে আমাদের নির্বাক করে দিয়েছে। আমরা যখন একটু সম্মান রক্ষার জন্য প্রাণপনে মেহনত করে যাচ্ছি তখন তারা হেসে খেলে ম্যাচ জিতছে। স্বগৌরবে মাছ ভাত খাচ্ছে আর আমরা যাচ্ছি অধপতনের দিকে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.