,

স্বাধীন আরাকান ছাড়া বিকল্প নাই

দেওয়ান কাইউম

বাংলাদেশের ভাগ্যে এখন কালো মেঘের ঘনঘটা। ১লা চৈত্র থেকে একের পর এক বন্যায় দেশের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাথে ফসলাদি সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। বানবাসী মানুষ এখনও বাড়ী ফিরতে পারেনি। তাদের বাড়িঘর সম্পূর্নভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাভাবিক জীবন যাপনে এসেছে স্থবিরতা। এখন আবার পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এমনকি খাবার পানিও নাই। যে সব রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের জন্য এসেছে, এদের মধ্যে বয়স্কলোক, নারী ও শিশু বেশী। শরনার্থী শিবিরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। শরনার্থী সমস্যা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৭৭ সাল থেকে পাপিষ্ঠ বার্মিজদের অত্যাচারে প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বেশ কিছু রোহিঙ্গা ফেরত গেলেও মাঝে মাঝে পাপিষ্ঠ বার্মিজদের গণহত্যার কারনে বার বার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। ফেলে আসা রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘর ফসলাদি দখল করে নিয়েছে বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা নিজেদের ধর্ম অহিংসু ধর্ম বলে শ্লোগান দিচ্ছে। কিন্তু সেই বৌদ্ধরাই পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম সহিংসতার কাজ করে যাচ্ছে। মুসলমান ধর্মের পূর্বে পৃথিবীতে একশ্বরবাদ বিশ্বাসী বৌদ্ধরা কালের আবর্তে ভারতবর্ষ থেকে হিন্দু ধর্মালম্বীদের দ্বারা বিতারিত হয়ে পূর্বাঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সারা পৃথিবীতে বৌদ্ধরা অবহেলিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বর্বরতা, থ্যবড়া নাকীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিসের আলামত তা বুঝতে কাহারও বাকী নাই। ১৯৭১ সালে আমরা ১ কোটি বাঙ্গালী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভারতবাসীদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ যাবতীয় লজিষ্টিক সাপোর্ট পেয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছিলাম। তেমনীভাবে আমরা বাংলাদেশীরাও যেন অসহায় রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেই। বাংলাদেশের ভাগ্যকাশে বিজাতীয় জংগী সমস্যায় জর্জরিত শেষ হতে না হতেই রোহিঙ্গা সমস্যা এসে বাংলাদেশের উপর হাজির হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের কুটনীতি ভারসাম্য হারাচ্ছে। বন্ধু রাষ্ট্র বিনা কারনে বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। আর অপদার্থ জাতিসংঘ এর পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট না করে বুদ্ধিদ্বিপ্ত কর্মসূচী নিতে হবে আমাদের সরকারকে। যেখানে জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা সেই জাতিসংঘকে মুরুব্বী মেনে কিছুই হবেনা। জাতিসংঘ যদি শতকরা ৫০ ভাগও নিজস্ব ক্ষমতা আরোপ করতে পারতো সদস্য দেশগুলির উপর তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে ইস্রায়েল প্যালেষ্টাইনের সমস্যা শেষ করতে সময় লাগতো না। আমাদের দেশের মানুষ নিজের স্বার্থকেই সবসময় বড় করে দেখে। জাতিসংঘের ক্ষমতা থাকুক আর না থাকুক জাতিসংঘ বা জাতিসংঘের কোন সংগঠন বা এজেন্সীর একটা বড় স্কলারশীপ বা বড় বেতনের চাকুরী পেলেই আমরা বাঙ্গালী কিছু মানুষ খুশীতে বাকবাকিয়ে উঠি। পশ্চীমা শক্তির ইঙ্গিতে মুসলমানরা ধরা খাচ্ছেন এবং হাতের পুতুল হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন তাহা আমরা ক’জন বুঝি। ইরাকের সাদ্দাম, সৌদিআরবের লাদেনকে কে সৃষ্টি করলো আর কে শেষ করলো। সয়তানের দল আইএসকে কারা সৃষ্টি করে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমান হয়ে নিরাপরাধ মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করলো এসবকি সম্মিলিতভাবে মুসলমানদের অগ্রগতি ধ্বংস করার জন্য করা হয়নি? সারা পৃথিবীতে নিরীহ মানুষকে ইসলামী বিপ্লবীর নামে হত্যা করা ও মুসলিম নারীদেরকে ধর্ষণসহ কেনা বেচা করা কি কম করেছে আইএস পাপীরা। খোদ বাংলাদেশে অন্যধর্মী মানুষও মানবতাবাদী মানুষদের এমনকি নিরীহ বিদেশীদের কাফেরের মতো হত্যাকারী লোকরা এখন যেখানে আসল জেহাদ করছে। কিন্তু রোহিঙ্গা জাতির পক্ষে জেএমবির হারামী লোকদের বোমা মারতে দেখলাম না। আল্লাহু-আকবার বলে মগদের গলায় জেহাদের কোপ দেখতে পেলামনা কেন? জংগী বড় ভাইয়েরা দলে দলে মিয়ানমারে গিয়ে নিরীহ মুসলমানদের জন্য যুদ্ধ করছেন না কেন? এর উত্তর আমি জানি খুব ভাল করে। আম গাছে যেমন কাঁঠাল হয়না তেমনি ভন্ডদের দিয়ে কথা ছাড়া ভাল কাজ হয়না। পশু সব সময় পশুই হয়, যতই সে মানুষের মতো বুদ্ধিদ্বীপ্ত কাজ করেনা কেন। রোহিঙ্গা জাতিকে সাহায্য করার জন্য বার্মা সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবিদের বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে পাঠাতে হবে। যেহেতু মিয়ানমার আমাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আগাচ্ছে সেহেতু আমাদেরকেও আরসা বাহিনীকে লজিষ্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। অভিলম্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে শান্তি বাহিনী নিয়োগ করতে হবে। নোম্যানস ল্যান্ডে কোন মানুষ রাখা যাবেনা। মিয়ানমারকে আরাকান রাজ্য ছেড়ে দিয়ে স্বাধীন আরাকান দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্য একটি প্রস্তাব হতে পারে, আরাকানের মংডু শহর থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সেফ জোন ঘোষনা করে শান্তিরক্ষী বাহিনী দিয়ে প্রহরা দিতে হবে এবং এর জন্য যতো খরচ হবে তা মিয়ানমার সরকার বহন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বিনা বাধায় সাহায্য পাঠানোর ব্যবস্থা সহজ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের বোদ্ধধর্মালম্বী নেতাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। যাকে বলে কাটা দিয়ে কাটা তোলা। একটি কথা না বললে নয়, আমাদের মধ্যে এখন ফেসবুক ফ্যান্টাসী জোরদার হয়ে পাগলামীর পর্যায় চলে গেছে। যেমন লোহাকে গরম করে পরিমিতভাবে হাতুরী দিয়ে পিঠিয়ে যে কোন যন্ত্র তৈনী করতে হয়। অতিরিক্ত ভাবে লোহাকে পিঠালে আশাতীত কোন যন্ত্র তৈরী হয়না। ফেসবুকে অতিরিক্ত হারে লেখায় আরাকান রাজ্য দখল নিয়ে নেব কিংবা সৈন্য মোতায়ন করে মিয়ানমারকে কেন ভয় দেখানো হচ্ছে না ইহা বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়। কেন না ফেসবুকে বড় বড় কথা বলে শক্তি প্রদর্শন করা যায়না। শক্তি প্রদর্শন করতে হলে প্রচুর জ্ঞান বুদ্ধির প্রয়োজন। জিপিও ৫ পেয়েছি বলে চীৎকার করলেই বিদ্ধান হওয়া যায়না। আর প্রকৃত বিদ্যা না থাকলে অপরিনামদর্শী হয়ে নিজের ধ্বংস করা যায় বটে কোন কিছুর সমাধান করা যায়না। যেমন আরসা বাহিনী, তাদের হাতে থাকা কয়েশত রায়ফেল দিয়ে বার্মিজ বাহিনীর উপর হামলা করে রোহিঙ্গা জাতির উপর শুধুই বিপর্যয় ডেকে আনল। করনীয় যেটা ছিল তাহা হলো, নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করে আক্রমন করা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা উচিৎ ছিল। যেমন বার্মিজ বাহিনী যখন গ্রামবাসীর উপর হামলা করতে আসে তখন এন্টি পার্সন মাইন পুতে রেখে দিলে ব্যাটারা অত সহজে রোহিঙ্গাদের হত্যা করতে পারতো না। আধুনিক অস্ত্র না থাকলেও শুধু মাত্র বুদ্ধির জোরে যুদ্ধ করে প্রতিপক্ষের ক্ষতি সাধন করা সম্ভব। আর সেই যুদ্ধের নাম হলো গেরিলা যুদ্ধ। এসব সেনসেটিভ বিষয় এভাবে লেখা যায়না আর সেজন্য একটু হালকাভাবে লিখলাম। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের কঠোর মনিটরিং এর মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে জংগীরা অসহায় রোহিঙ্গাদের দেশ বিরোধী জংগী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে পারে। পরিশেষে পাঠকদের মতামত, আলোচনা সমালোচনা আশা করবো।

দেওয়ান কাইউম
ঊসধরষ: ফবধিহষড়হফড়হ@ুধযড়ড়.পড়স

ঋড়ড়ঃ ঘড়ঃব : পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, এই সংখ্যায় লেখক দেওয়ান কাইউম হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। দেশ বিদেশে অবস্থান করার সাথে বাংলদেশের জংগী বিরোধী কার্যক্রমে পরামর্শ দাতা, মরো মুক্তিফ্রন্ট ও প্যালেষ্টাই লিবারেশন অর্গানাইজেশন (চখঙ) এর জন্য বিনা পারিশ্রমিকে সময় সময় পরামর্শ দিয়েছিলেন। দেশাবাসীর কাছে আমরা স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে উনার জন্য দোয়া চাই।
চেয়ারম্যান
স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন, হবিগঞ্জ জেলা শাখা।


     এই বিভাগের আরো খবর