,

নবীগঞ্জে বিস্কুটের কার্টুন থেকে নব জাতক উদ্ধার…দত্তক নিতে দেশ বিদেশ থেকে নিঃসন্তান দম্পতির চেষ্টা ॥ সন্ধান পাওয়া যায়নি পিতা-মাতার ॥ অবশেষে রওশনের কোলে নবজাতক

জসিম তালুকদার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রগ্রাম সড়কের নাদামপুর সংলগ্ন সুমি হাউজের গেইটের ভেতরে এক নব জাতক (ছেলে) কে বিস্কুটের কার্টুন থেকে পাওয়া গেছে। দিনভর এ নবজাতকের পিতৃমাতৃ পরিচয় উদঘাটন করতে না পেরে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ বাহুবল সমাজ সেবা অফিসার রওশন বেগমের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, গত ৪ ফেব্র“য়ারী বুধবার দিবাগত রাত ১২ টায় সুমি হাউজের ভাড়াটিয়া সিএনজি অটো রিক্সা চালক হেলাল মিয়া বাসার বাউন্ডারী দেয়ালের কাছে একটি বিস্কুটের কার্টুনের ভেতরে চেচামেচির শব্দ পান। কার্টুনের কাছে কুকুর বসে থাকতে দেখে কার্টুনের ভেতরে কুকুরের বাচ্ছা মনে করে হেলাল মিয়া সিএনজি অটো রিক্সা নিয়ে আবার শহরের দিকে চলে যান। কিছুন পরে হেলাল মিয়ার স্ত্রী কার্টুনের ভেতরে নবজাতকে দেখতে পেয়ে হেলাল মিয়াকে খবর দেন। হেলাল মিয়া বাড়ী পৌছে নব জাতক ছেলেটিকে দেখে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরীকে জানান। সাইফুল জাহান চৌধুরী নব জাতককে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী নবীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ লিয়াকত আলীকে অবহিত করলে তিনি ও নব জাতককে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ প্রেক্ষিত সিএনজি চালক হেলাল মিয়া, শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুফায়েল আহমদ, আব্দুল বাছিত ও সামসুল ইসলাম নব জাতককে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। নব জাতকের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হলে গভীর রাতে নব জাতককে তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্যে নিঃসন্তান দম্পতিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভীড় জমান। সুদুর ইংল্যান্ড, দুবাই থেকে ফোন আসে। সন্তানের আশায় অনেক নিঃসন্তান দম্পতিরা থানায় হাজির হন। এদিকে নবীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ লিয়াকত আলী নব জাতকের বৈধ পিতামাতার খোঁজ নিতে এস.আই সুদিন দাশকে নির্দেশ প্রদান করেন। দিনভর এস.আই সুদিন দাশ বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ খবর নিয়ে ওই নব জাতকের কোন বৈধ পিতা মাতার হদিস পাননি। গতকাল ৫ ফেব্র“য়ারী রাত ৯ টায় নবীগঞ্জ অফিসার ইনচার্জ মোঃ লিয়াকত আলী উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার যোগাযোগ সাপেক্ষে বাহুবল উপজেলা সামাজ সেবা অফিসার রওশন বেগম আবেদনের প্রেক্ষিতে নব জাতককে তার জিম্মায় দেয়। হেলাল মিয়া জানান, রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সহকারী সাইফুল আলম নব জাতককে ভর্তি করতে অপারগতা প্রকাশ করলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ফোনে নব জাতককে ভর্তি করতে বললে ভর্তি করা হয়। রাতভর করগাঁও ইউনিয়নের রাঙ্গা মিয়ার স্ত্রী আছিয়া বেগম নব জাতককে কোলে নিয়ে যতœ করেন। পরদিন গতকাল রাতে পুলিশের উপস্থিতিতে আছিয়া বেগম রওশন বেগমের হাতে শিশুটিকে তুলে দেন। হেলাল মিয়া বলেন, সুমি হাউজের চারিদিকে শিয়ালের উপদ্রব বেড়েছে আর কার্টুনের নব জাতককে পাহাড়া দেয় কুকুর। আল্লাহর দয়ায় নব জাতকটি হাসপাতালে ভর্তি হলে আছিয়ার এক প্রতিবেশী দুধবতী মহিলা নবজাতককে বুকের দুধ পাণ করায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাকারিয়া ও রওশন বেগম দম্পতির বিগত ১০ বছর ধরে সংসার জীবনে তাদের কোলে জুড়ে সন্তান জন্মায়নি। কোলে সন্তান পেয়ে রওশন বেগম আনন্দে আত্বহারা হয়ে উঠেন। উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নব জাতককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অঙ্গীকার করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর