বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলার মিরপুরে হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, সম্প্রতি অগ্নিকান্ডে মিরপুরের বেদে পল্লীর ২১ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অনুদান বরাদ্দ হয়। উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর ও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উদ্যোগে এই অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কেয়া চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করা হয়। বিকেলে অনুষ্ঠানে আসরের নামাজের বিরতির সময় তারা মিয়া ও
সাহেদ মিয়ার নেতৃত্বে অনুষ্ঠানস্থলে এসে কেয়া চৌধুরীর ওপর হামলা চালায় বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এসময় কেয়া চৌধুরীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পাশাপাশি ‘কে তোকে এখানে আসতে বলেছে’ ‘কে তোকে এমপি বানিয়েছে’ বিভিন্ন বাজে মন্তব্য করে। এ সময় এমপি কেয়া চৌধুরী মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে হামলাকারীরা তাঁর হাত থেকে জোর পূর্বক মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মিরপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ সংলগ্ন বেদে পল্লীতে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের চেক হস্তান্তরের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সময় তার ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটে। সদ্য উপ-নির্বাচনে বিজয়ী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তারা মিয়া ও জেলা পরিষদের সদস্য সাহেদ মিয়ার নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে র্যাব ০৯ সহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সমাবেশে এমপি কেয়া চৌধুরী হামলাকারীদের নাম-পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত বেদে লোকজনের কাছে এসেছিলাম। কিন্তু একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় জোয়াড়ি তারা মিয়া ও সাহেদের নেতৃত্বে একদল উশৃঙ্খল কর্মীরা আমার উপর নগ্ন হামলা করে ও আমার মঞ্চ থেকে মাইক খুলে নিয়ে যায়। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জনগণের কাছে এর বিচার দিয়ে বলেন, আপনারাই বলুন আমার কি অপরাধ। কেন এরা আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন জনগণের কাছে পৌঁেছ দিতে বাঁধা দিচ্ছে। ওই হামলাকারী কারা বা সেই সময়ে পুলিশের ভূমিকাসহ সার্বিক বিষয়ে তিনি জানতে চান। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষনিক এমপি কেয়া চৌধুরীকে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত ৮টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জমিস উদ্দিন জানান, মিরপুরের বেদে পল্লীতে অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। উক্ত অনুষ্ঠান নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা কর্মীরা উক্ত অনুষ্ঠানে মূল্যায়ন পাননি এমন অভিযোগ এনে ক্ষিপ্ত হয়ে তর্ক-বির্তকের এক পর্যায়ে এমপি কেয়া চৌধুরীর উপর হামলা চালায়। তবে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার জন্য শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন। এবং আইনশৃংখা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি। বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুক আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এলাকার পরিবেশ মোটামোটি শান্ত রয়েছে এবং আইনশৃংলা রক্ষায় পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। এ ব্যাপারে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাহুবল উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান তারা মিয়া। তিনি আরো বলেন, উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কেয়া চৌধুরী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ফিরোজ আলীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এজন্যই কি হামলা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, মোবাইলে ছবি তোলা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাতে এমপি কেয়া চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ ইমরান চৌধুরী ফোন রিসিভ করেন এবং তিনি জানান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন এবং তাঁর জ্ঞান ফিরেনি বলে জানান।