,

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে

সময় ডেস্ক ॥ উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হবে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আদালতের রায় অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। গতকাল সংসদের চলতি বাজেট  অধিবেশনের সমাপনী দিনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই অংশ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, আন্দোলনকারীরা যে কী চায় বারবার জিজ্ঞাসা করা হলেও সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। এ বিষয়ে সরকার থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাহলে এদের (আন্দোলনকারী) অসুবিধাটা কোথায় আমার সেটাই প্রশ্ন? তবে আন্দোলনের নামে যারা ভিসি’র বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তারা যে কি চায় বারবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেটা কিন্তু সঠিকভাবে তারা বলতে পারে না। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বুধবারই বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায় রয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের রায় আছে যে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ওইভাবে সংরক্ষণ থাকবে। আমরা হাইকোর্টের রায় কীভাবে লঙ্ঘন করবো। কীভাবে হাইকোর্টের রায় বাদ দেবো? সেটা তো আমরা করতে পারছি না। তবে তো হাইকোর্টের রায় অবমাননা হবে। তবে কোটা যেটাই থাকুক, কোটা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে যে জায়গায় খালি থাকবে সেখানে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে এবং সেটাই করা হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র বাসভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে ভালো কথা, কিন্তু ভিসি’র বাড়িতে আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়া, গাড়িতে আগুন দেয়া, বাড়িতে আগুন দেয়া, ভাঙচুর এবং লুটপাট করা, এমনকি ভিসি’র পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এটা কী কোনো শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কী কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে? তিনি বলেন, আজকে তারা কথায় কথায় আন্দোলনের নামে ক্লাসে তালা দেয়, ক্লাস করবে না, পরীক্ষা দেবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কে হবে? সেশন জট আগে অনেক ছিল, অন্তত আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেশন জট দূর করেছি। সেশন জট ছিল না। কিন্তু এখন তাদের (আন্দোলনকারী) কারণেই আজকে আবার সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, মাত্র ১৫ টাকা হলের সিট ভাড়া, আর ৩০ টাকার খাবার পৃথিবীর কোথায় আছে? আজকে যারা হলে থাকে, তাদের জন্য নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকার সিট ভাড়া দিয়ে আর ৩০ টাকার খাবার খেয়ে যারা লাফালাফি করে, তাহলে সিট ভাড়া আর খাবার যে বাজার দর আছে সেইভাবেই দিতে হবে তাদের। সেটা না করে তারা হলের গেট ভেঙে ফেলবে, মধ্য রাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে- এটা কী আন্দোলন? মধ্য রাতে ছাত্রীরা বের হয়ে যাবে। আমি চিন্তায় বাঁচি না। ভোর সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত তাদের সবার হলে পৌঁছে দিয়ে আমি ঘুমিয়েছি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভিসি’র বাড়িতে সিসি ক্যামেরা ছিল, হামলার সময় সেটা ভেঙে ফেলেছে। চিপটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে যেন হামলাকারীদের দেখা না যায়। কিন্তু তারা জানতো না আশে পাশে আরও অনেক ক্যামেরা ছিল। বৃটিশ কাউন্সিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা ছিল, সেই  ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একটা একটা করে হামলাকারীকে খুঁজে বের করা হচ্ছে। এখানে যারা ভাঙচুর করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে- তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদের ছাড়া যায় না। জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকে স্বীকারও করেছে। যেখানেই যারা থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে, তারা যতই আন্দোলর করুক। তিনি বলেন, শিক্ষার নীতিমালা তো সরকার করবে। সেটা আমাদের দেখার বিষয়, শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করবে। অনেক জায়গায় চাকরি খালি আছে, যারা মেধা তালিকায় থাকছে, কেউই বাদ যাচ্ছে না। যারাই মেধাবী তারা কোন কোনোভাবে চাকরি পাচ্ছে। এবারের সংসদ সুন্দর ও সহনশীল পরিবেশ ছিল: বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সংসদে ভদ্র, সুন্দর, সহনশীল পরিবেশ ছিল। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যেটা হওয়ার কথা ছিল মূলত সেটাই হয়েছে। অতীতে সংসদে খিস্তিখেউর, জনপ্রতিনিধি হলেও ফাইল ছোড়াছুড়ি, টেলিভিশনের ক্যামেরা ভাঙচুর, অভদ্র কথাবার্তায় এমন বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়ে যেতাম, যাতে জাতির কাছে লজ্জিত হতাম। এবারের সংসদ ২০১৪ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গঠন হয়েছে। সংসদ অধিবেশনে কোনো অশালীন ঘটনা হয়নি। বিরোধী দল সংসদে থেকে প্রত্যেকটা বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, বাজেট অধিবেশনে দেশের ইতিহাসে সবচাইতে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি। কারণ আমাদের একটাই লক্ষ্য তা হচ্ছে- দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। আমরা প্রতিটি বছর প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ ভাগে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হয়েছি। বিশ্বের কেউ বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। আমরা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করার লক্ষ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে অনেক ঝড়-ঝঞ্ছা মোকাবিলা করে আজ বাংলাদেশ শুধু উন্নয়ন করছে না, স্থায়ী উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর