,

আত্মহত্যা কেন বাড়ছে প্রতিরোধে করণীয় কী?

সময় ডেস্ক ॥ আরিফ ( ছদ্মনাম)। গত জানুয়ারিতে ২৩ বছর বয়সে পা দিয়েছে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড মেধাবী। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এত মেধাবী হওয়ার পরও পরীক্ষায় তার ফলাফল ভাল হয় না। সে প্রচুর বই পড়তে ভালবাসে, সঙ্গে খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানেও বেশ পটু সে। কিন্তু আরিফের বাবার এসব পছন্দ না। একমাত্র ছেলে পড়াশোনায় প্রথম হবে, বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করবে এটিই তার স্বপ্ন। আফসোস, তিনি কখনও জানতে চাননি আরিফ কী চায়? ঈদের দিন। সকাল ৯টা। সবাই নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আরিফের দরজায় কড়া নাড়লেন তার বাবা। অনেক ডাকাডাকি, রাগারাগির পর দরজা ভেঙে যখন ঘরে প্রবেশ করলেন, দেখলেন প্রিয় আরিফের গলাখানি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে, সঙ্গে নিথর দেহটা সটান হয়ে আছে। আরিফের বাবা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। হঠাৎ চোখে পড়ল সুইসাইড নোট। দীর্ঘ দুই মাস ধরে লেখা ২৬ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট। ধীরে ধীরে একটু একটু করে পড়তে লাগলেন তিনি। প্রতিটি লাইন পড়ার সময় গা কাঁটা দিয়ে উঠছিল তার। আর প্রতিটি পৃষ্ঠা অশ্রুর ফোঁটায় ভিজে কলমের লিখাগুলোকে মুছে দিচ্ছিল। আসলে জীবনটাই যেখানে মুছে গেছে, কলমে লেখা লাইনগুলো তো তার তুলনায় অতি নগন্য। চলুন একটু খুঁজে আসি কেন আরিফ এই পথ বেছে নিল? পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে না পারা, সঙ্গে বাবার ‘তোর দ্বারা কিছুই হবে না, জীবনে কিছুই করতে পারবি না’ এই নেগেটিভ হাইপ থেকেই ধীরে ধীরে আত্মহত্যার জন্য প্রস্তুতি নেয় আরিফ। দীর্ঘ ১২০ দিন পর তার আত্মহত্যা করার প্রিপারেশন শেষ হয়। কী এক অদ্ভুত ব্যাপার, ঈদের দিন সকালে তার আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে ২৩ বছরের টগবগে জীবনের গল্প শেষ হয়,সঙ্গে তার আত্মহত্যার জন্য নেয়া প্রস্তুতিও ষোলকলা পূর্ণ হয়। আত্মহত্যা করা অপরাধ, আত্মহত্যাকারী একজন পাপী। কিন্তু আত্মহত্যাতে জেনে-না জেনে, বুঝে-না বুঝে প্ররোচনা দেওয়াটা এই সমাজে অপরাধ না! আমাদের আশপাশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য সন্তান আছে যারা প্রতিনিয়ত নিজের কাছে মারা যায়, তাদের হাত তুলে ধরার মত, ভাল কথা বলার মত, মোটিভেট করার মত, অনুপ্ররণাদায়ী কথা শোনানোর মত পাশে কেউ থাকে না। এমনকি পরিবারের লোকজনও আগ্রহ আর ভালবাসা নিয়ে জানার চেষ্টা করে না, আসলে সন্তান কী চায়? এদেশে দুই ধরনের প্রফেশনাল স্পিকার পাওয়া যায়।একদল মোটিভেশনাল স্পিকার চোখে পড়ে, যাদের ফেসবুক পেজে নীল টিক চিহ্ন, আর ইউটিউবে ১ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার দেখে তরুণ প্রজন্ম আদর্শ ভাবে। এ ধরণের স্পিকার শুধু ইহলৌকিক জীবন নিয়েই কথা বলেন, পারলৌকিক জীবনে কী করণীয় এসব বিষয়ে তাদের ১ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপও খুঁজে পাওয়া যায় না। আরেকদল আছেন ধর্মীয় বক্তা। তারা শুধু পারলৌকিক জীবনে গুরুত্ব দিলেও ইহলৌকিক পড়াশোনা, চাকরি, হতাশা, জীবনের লক্ষ্য এসব বিষয়ে অনেক বেশি এড়িয়ে যান। ফলে তরুণ প্রজন্মের কেউই সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে না। প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এখন আমরা সুখী হওয়ার থেকে মানুষকে সুখী দেখানো বেশি পছন্দ করি। তাই হতাশা বাড়ছে,খুন, সুইসাইড বাড়ছে। কিন্তু এর শেষ কোথায়? শেষ খোঁজার আগে শুরুটা খুঁজতে হবে। বাবা-মাকে ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে সময় দিতে হবে। বিনয়ী হতে শেখাতে হবে, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জ্ঞানকে বাস্তবে শেখাতে হবে? দুটোই যে এক অপরের পরিপূরক এই বিদ্যা শেখানো সবার আগে জরুরি। শুধু জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে তার পেছনে সন্তানকে ছুটতে বললে হবে না, কোথায় লাগাম দিতে হবে সেটা তাকে জানানোটাও জরুরি। আত্মহত্যা কেউ করলে ফেসবুকে জবংঃ রহ চবধপব (জওচ) লেখাটা কোন সমাধান না। আপনার আশেপাশে হাসিখুশী মানুষগুলো হয়ত প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে ভুগছে, তার মনের ভিতরের সেই ডিপ্রেশন খুঁজে পজিটিভ হাইপ দিয়ে তাকে সঠিক রাস্তা দেখানোটাই সাফল্য, আর এটাই একমাত্র সমাধান। আসুন আজ থেকে বিনয়ী হই, আর মানুষের ভালো দিকগুলোকে প্রমোট করি। শুরুটা হোক আমাকে, আপনাকে দিয়ে। আমি শুরু করেছি, আপনি করছেন তো?


     এই বিভাগের আরো খবর