,

হবিগঞ্জে পরিবেশগত সংকট বিষয়ক মতবিনিময় সভা

সংবাদদাতা ॥ হবিগঞ্জে ‘পরিবেশগত সংকট বিষয়ক’ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এই সভার আয়োজন করে। বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো: ইকরামুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অতিথি ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এগ্রিকালচারাল এন্ড মিনারেল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক ড. রোমেল আহমেদ, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: মুজিবুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক জনপ্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী মোমিন প্রমূখ। শুরুতে বিষয়ের উপর ধারণা বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল। সভায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: মুজিবুর রহমান প্রশ্ন রাখেন, উন্নয়ন কার জন্য? যে উন্নয়ন মানুষ ও মানবতা ধ্বংস করে সেটি কি উন্নয়ন পারে? তিনি বলেন, হবিগঞ্জে যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে তা অনুধাবন করার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে এখানে পরিবেশগত সুশাসন নেই। শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড?ানো যায় না। সরকার ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যকর ভূমিকা না রাখলে পরিবেশ-প্রতিবেশ টিকে থাকেনা। বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, হবিগঞ্জ একটি সম্ভাবনাময় জেলা। কিন্তু উন্নয়ন তথা শিল্প উন্নয়নের নামে হবিগঞ্জে যা হচ্ছে তা সেই সম্ভাবনা বিনাশ করছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই হবিগঞ্জে পরিবেশগত বিপর্যয় এর ফলাফলস্বরূপ মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার, খনিজ সম্পদে ভরপুর প্রকৃতির আধার জেলাটি গুটি কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যে উন্নয়ন মানুষের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে না; যে উন্নয়ন পরিবেশ ও প্রতিবেশগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়না, তা উন্নয়ন নয়; বরং অবোন্নয়ন। বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রোমেল আহমেদ বলেন, হবিগঞ্জের পরিবেশগত সংকট দেখে আমি ব্যতীত হয়েছি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে পরিবেশগত সংকট কাটবে না। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বিভাগে যারা বসে আছেন তারা পরিবেশ নিয়ে সচেতন হলে এই সংকট তৈরি হতো না। ১৯৭০ সাল থেকে স্যাটেলাইট ইমেজ নিয়ে বুঝা যাবে কতটুকু পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। আমরা সেই ইমেজ বাপা ও খোয়াই ওয়াটারকিপারকে সরবরাহ করবো। পানি দূষণ, বায়ু দূষণসহ অন্যান্য দূষণ এর মাত্রা নিয়ে আমরা বাপার সাথে কাজ করব। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবিগঞ্জের পাশে থাকবে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মো: ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, খোয়াই নদী, পুরাতন খোয়াইসহ জেলার জলাশয়গুলো মারাত্মক সংকটাপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে। দিনের পর দিন পুরাতন খোয়াই নদী দখল হচ্ছে। পুকুরের শহর হবিগঞ্জে অনেক পুকুর হারিয়ে গেছে দখল, ভরাটের কারণে। জেলায় গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে কৃষিজমি, নদী, খালবিল, জলাশয়গুলো মারাত্মক দূষণের কবলে রয়েছে। মানুষ সংকটাপন্ন পরিবেশের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ধারণা বক্তব্যে তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদী দখল, নদী দূষণ হবিগঞ্জের প্রধান পরিবেশ সংকট। পরিকল্পিত শহরের জন্য মাস্টার প্ল্যান দরকার। এত বছরেও শহরে সুষ্টু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। শিল্পবর্জ্য নদী ও খালে ফেলায় হবিগঞ্জের পানি দূষন হচ্ছে। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জৈব-বৈচিত্র সংকটাপূর্ণ।


     এই বিভাগের আরো খবর