,

খিঁচুনি হলে করনীয়

সময় ডেস্ক : হঠাৎ করেই যে কেউ, যেকোনো অবস্থায়, হাত–পা ছুড়ে, দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। সত্যিকারের খিঁচুনি, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে সিজার, হলে রোগী খিঁচুনির সঙ্গে সঙ্গে দাঁত দিয়ে জিব কেটে ফেলতে পারেন, কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন, নিজের অজান্তে কখনো কখনো প্রস্রাব বা পায়খানাও হয়ে যেতে পারে।
খিঁচুনি হলেই আমরা শুধু মৃগী রোগের কথা বলি। অথচ আরও অনেক কারণেই খিঁচুনি হতে পারে। বারবার খিঁচুনি হলে সাধারণত তা মৃগীরোগের কারণেই হয়। মৃগীরোগের তেমন নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। মস্তিষ্কের কিছু সমস্যা, যেমন মস্তিষ্কের প্রদাহ, আঘাতজনিত সমস্যা, টিউমার, স্ট্রোক প্রভৃতি কারণে রক্তে লবণের পরিমাণে অস্বাভাবিকতা, শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণেও খিঁচুনি হতে পারে। খিঁচুনি হওয়ার আগে রোগী বুঝতে পারে না বা বুঝতে পারলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পায় না। একেবারে হঠাৎ করেই এটি শুরু হয়ে যায়, স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে না। আর তাই খিঁচুনি শুরু হলে রোগীর ভয়ংকর অবস্থা দেখে আশপাশের সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তবে ঠান্ডা মাথায় এই পরিস্থিতিতে করণীয় কাজটি না করতে পারলে রোগীর সমূহ বিপদের আশঙ্কা থাকে। তাই আশপাশের কারও হঠাৎ করে খিঁচুনি শুরু হলে প্রাথমিকভাবে কী করা উচিত, সে ব্যাপারে সবারই ন্যূনতম জ্ঞান থাকা দরকার।
কী করবেন : খিঁচুনি যেহেতু হুট করেই শুরু হয়, প্রথমেই দেখা প্রয়োজন রোগী কোনো বিপজ্জনক অবস্থায় আছে কি না। বিশেষ করে আগুন, পানি বা কোনো যন্ত্রপাতির কাছে থাকলে, চলন্ত যানবাহন বা রাস্তায় থাকলে প্রথমেই রোগীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। এ সময় বেশির ভাগ রোগীর মুখ থেকে প্রচুর লালা বের হয়। এই লালা শ্বাসনালির ভেতর গেলে মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। তাই রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে লালা গড়িয়ে বাইরে পড়ে যায়।
রোগীর মাথার নিচে বালিশ বা কুশন দেওয়া যেতে পারে। যদি এসব পাওয়া না যায়, কাপড় ভাঁজ করে বা প্রয়োজনে সাহায্যকারীর হাতের ওপরও রোগীর মাথা রাখা যায়। এ সময় দাঁতে দাঁত লেগে যায় বলে অনেকে মুখের ভেতর চামচ বা শক্ত কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনটা করা একদমই উচিত নয়। অনেকে মুখে পানি দেওয়ার চেষ্টা করেন, কেউবা জুতার সুকতলা শোঁকানোর চেষ্টা চালান, যা কিনা রোগীর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বরং এ সময় রোগীর পরিধেয় পোশাক ঢিলা করে বেল্ট, চশমা ইত্যাদি খুলে রাখা প্রয়োজন, যাতে কোনোভাবে কোনো কিছু দ্বারা রোগী আঘাতপ্রাপ্ত না হন।
অধিকাংশ সময় খিঁচুনি স্বল্প সময়ের ভেতর আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত। তবে টানা অনেকক্ষণ ধরে খিঁচুনি হতে থাকলে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থানান্তর করা প্রয়োজন হতে পারে।
খিঁচুনি কমে যাওয়ার পরও কিছু সময় পর্যন্ত শারীরিক বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতে পারে রোগী, তাই তাকে বিশ্রামে রেখে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আর পরবর্তী সময়ে সঠিক চিকিৎসার জন্যও খিঁচুনির সময়ে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
চিকিৎসা : খিঁচুনি মূলত কোনো রোগ না। তবে এটি অনেক রোগের লক্ষণ। তাই খিঁচুনি হলে রোগীর ইতিহাস পর্যালোচনা এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নিশ্চিত করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যাদের খিঁচুনিজনিত সমস্যা আছে, তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। পানি, আগুন বা বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি থেকে তাদের সাবধানে থাকতে হবে। গাড়ি চালানো বা উঁচুতে উঠে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। খিঁচুনির কারণ খুঁজে পেলে তার চিকিৎসা দিলে খিঁচুনি থেকে মুক্তি মেলে। কিন্তু মৃগীরোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন পড়ে।
খিঁচুনি একটা স্নায়ুঘটিত সমস্যা। খিঁচুনিকালে আতঙ্কিত বা অস্থির না হয়ে করণীয় কাজটি ঠান্ডা মাথায় করলে অহেতুক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।


     এই বিভাগের আরো খবর