,

বেকারত্ব ঘোচাতে করনীয় কি?

রেজাউল হাসান

বেকারত্ব বলতে কি বুঝায়? ধারণা করা হয় যে, অবস্থান, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কাজ করতে না পারার বিষয়টিকে বেকারত্ব বলে। আপনি যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে সেটাকে বেকারত্ব বলতে পারেন। বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি বা সংকট। দেশের বিদ্যমান কাঠামোতে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তি কাজ না পেলে তাকে বলা হয় বেকার। একজন বেকার মানুষ যেন গোটা সমাজের দ্বারা অভিশপ্ত।
বেকারদের নিয়ে বললে প্রথমেই আসে সমাজ ও পারিবারিক জীবনে তাদের অবস্থান। বেকার থাকা ছেলেটাকে মনে করা হয়, সমাজ বা পরিবারের অভিশাপ। এসব বেকারদের দিনের শুরুটাই হয় অন্যের এবং পরিবারের সদস্য কর্তৃক ধিক্কার দ্বারা। সমাজের কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদেরকে ধিক্কার দিতে থাকে। দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারনে একজন বেকারের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। তখন কেউ কেউ হতাশা ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে নিয়ে ফেলে ভুল পদক্ষেপ। অনেকে নিজেকে অসামাজিক ও খারাপ কাজে জরিয়ে ফেলে। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পরে পরিবার ও দেশের উপর।
যে যুব সমাজ দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখার কথা সে যুব সমাজ কর্মের অভাবে দিন কাটায় বহু কষ্টে। অসচ্ছল পরিবার থেকে একজন বেকারকে পেতে হয় লজ্জা ও হীনতা। তার কারন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। কেননা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে বহুশিক্ষিত বেকার কিছু শুরু করতে পারে না। অথচ ইউরোপ আমেরিকায় রাস্তায় ফল বা সবজি বিক্রি করতেও গ্রাজুয়েটরা একটু লজ্জাবোধ করেন না। কারন তাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিটা অন্যরকম। কিন্তু কেন এত বেকারত্ব হয় তা দেখার বা ভাবার যেন কেউ নেই।
বেকারত্ব হল বাংলাদেশের একটি সামাজিক সমস্যা। এটি বর্তমান সময়ে দেশের একটি বড় ও জটিল সমস্যায় পরিনত হয়েছে। শিল্পায়নের অভাব, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, সমন্বয়হীন শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষাব্যবস্থার সাথে সমাজ ব্যবস্থার সমন্বয় হীনতা, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির উন্নয়নের অভাব, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্হার অভাবের কারনেই দিন কে দিন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের দিক দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আই এলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি এর মত। এত বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া, শিল্পকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত করা। তাছাড়া উৎপাদনমূখী শিক্ষা ব্যবস্থাও বেকারত্ব ঘোচাতে ফলপ্রসূ ভুমিকা রাখতে পারে।
বেকারত্ব নিয়ে মনীষীদের বিশ্লেষণে পাওয়া যায়, ‘বেকারত্বের সবচেয়ে খারাপ দিক ক্ষুধা নয় বরং সবচেয়ে বড় খারাপ হল অলসতা’। সাফল্য তোমার কাছে আসবেনা। তোমাকে অর্জন করতে হবে। আর এটা না বুঝলেই তোমাকে বেকারত্বের শিকার হতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নবী কারিম (সা:) পদক্ষেপ গ্রহণ করে উদ্যোগী ও উদপাদনশীলতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে ‘নিজ হাতে উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু। যে চেষ্টা করবে রিজিকের সন্ধানে জমিনে ছড়িয়ে পড়বে সে রিজিক পাওয়ার যোগ্য আর যে অলস বসে থাকে সে বঞ্চিত হওয়ার যোগ্য।
পরিশেষে বলা যায় যে, তরুণ প্রজন্মের চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে আত্ন-কর্মসংস্হানমূলক কাজের কথা ভাবা। বেকারত্ব ঘোচাতে সরকারকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে বেকারত্ব অনেকটাই লাঘব হতে পারে।


     এই বিভাগের আরো খবর