,

এফডিসি কর্মীদের মানবেতর জীবন

সময় ডেস্ক : মঙ্গলবার দুপুর তিনটা। একেবারেই ফাঁকা বিএফডিসি। দুই-একটি ফ্লোর ছাড়া কর্মব্যস্ততা নেই কোথাও। ৯নং ফ্লোরের দ্বিতীয় তলার বারান্দা আশেপাশও জনশূন্য। সেখানে কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে, আনমনে দাঁড়িয়ে আছেন এফডিসির ইলেকট্রিক তত্বাবধায়ক তাহমিদুর রহমান মিলন। কাছে গিয়ে এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সম্পর্কে জানতে চাইতেই তার মন যেন আরও খারাপ হয়ে গেল। কারণ, প্রায় পাঁচ মাস হলো বেতন পান না তিনি। এর মধ্যে চলে এসেছে রোজা, সামনে আসছে ঈদ।
শুরুতেই তিনি জানালেন, ‘বলা চলে, আমরা সরকারি চাকরি করি কিন্তু বেতন পাই না প্রায় ৫ মাস। আমাদের কিসের রোজা আর কিসের ঈদ! এক পদের তরকারি দিয়ে খাবার খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে। আমাদেরটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু বাচ্চাদের বিষয়টি কীভাবে মেনে নেই। তাদের কষ্ট সহ্য করার মতো না।’
শুধু তাহমিদুর রহমান মিলন নন। তার মতো এফডিসির ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর একই অবস্থা। কারণ, সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সময় মতো টাকা না পাওয়ায় এফডিসির ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন আটকে আছে। সেই বেতনের দাবিতেই মঙ্গলবার এফডিসিতে মানববন্ধন করলেন কর্মচারীরা।
বাংলাদেশ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন চৌদ্দটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে এফডিসি একটি। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আয় দিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যয় বহন করতে হয়। একসময় প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক ছিল, সরকারের রাজস্বেও যোগান দিত। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের আয় কমেছে। শুধু কমেছে বললে ভুল হবে, বছরের পর বছর তিনগুন লোকসান গুণতে হচ্ছে।
এফডিসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ মিলিমিটারে (সেলুলয়েড) চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় কাঁচা ফিল্ম বিক্রয়, ল্যাব প্রিন্ট হতো। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কাঁচা ফিল্ম বিক্রয় বন্ধ, ল্যাব প্রিন্ট এবং এফডিসির ভবন নির্মাণে তিনটি ফ্লোর ভেঙে ফেলাতে প্রতিষ্ঠানটি ৭০ ভাগ আয় কমে যায়। এছাড়াও সিনেমা হল কমে যাওয়াতে প্রযোজকদের চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ কমেছে।
বর্তমানে এফডিসিতে ফ্লোর, ক্যামেরা ডাবিং, এডিটিং, লাইট, কালার গ্রেডিং, ভিএফএক্স, শুটিং স্পট ইত্যাদি ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে মাসে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা আয় হয়। তার বিপরীতে ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলে মাসে ব্যয় প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ টাকা। আয় কমে যাওয়ায় এফডিসি এখন চরম সংকটে।
সর্বশেষ এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ের জন্য এফডিসির কিছু জায়গা অধিগ্রহণ বাবদ সরকার ৬ কোটি টাকা দেয়। তা এফডিআর করে রাখা হয়েছে। এফডিআর থেকে লোন নিয়ে গত ৮ মাস ধরে বেতন পরিশোধ করে চলছিল। বর্তমানে এফডিআরের বিপরীতে লোন নেওয়ার আর সুযোগ নেই। এমন প্রেক্ষাপটে গত চার মাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছে।
এর আগে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভাঙিয়ে বেতন ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। এক সময় এফডিআর শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকারি প্রণোদনায় কিছুদিন ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছিল।


     এই বিভাগের আরো খবর