,

সম্পদে এগিয়ে রেজা, শিক্ষায় পিছিয়ে সুজাত, হলফনামায় হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি প্রার্থীদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের বিবরণ

মতিউর রহমান মুন্না :: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থীদেরকে নিজেদের আয়-ব্যয়, সম্পদের বিবরণ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত কি না, অতীতে কোনো মামলা ছিল কি না, সেই সঙ্গে পেশা ও আয়ের উৎস, ব্যাংকে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে দায়দেনা আছে কি না সহ বিস্তারিত তথ্য হলফনামায় নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থী নোটারী পাবলিকে হলফনামার মাধ্যমে নিজেদের যেসব তথ্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছেন এরমধ্যে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের ৫জন প্রার্থীর হলফনামার তথ্য পাঠকদের উদ্দেশ্যে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো।  আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী- গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী)ঃ  তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মন্ত্রী মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী ও মরহুমা আলম রওশন চৌধুরীর পুত্র। হলফনামায় তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বি,কম উল্লেখ করেন। তার নামে কোন মামলা নেই। তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেন। তার কৃষিখাত, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক কোন আয় নেই। পরামর্শক ইত্যাদি থেকে তার বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪শ’ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬ হাজার ১শ’ টাকা জমা রয়েছে। তার লিঃ কোম্পানীর পরিচালক হিসেবে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৬শ’ টাকার শেয়ার রয়েছে। তার ব্যবহারের স্বর্ণ রয়েছে ৪ তোলা যার তৎকালীন মূল্য ৫ হাজার টাকা। বিয়েতে প্রাপ্ত টিভি ফ্রিজসহ ১০ হাজার টাকার মালামাল রয়েছে। তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন তার পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু সেগুলো ভাগ বন্টন করা হয়নি। তার জামানত বিহীন ঋণ রয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
গণফোরাম মনোনীত প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়াঃ তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়া ও মরহুমা আসমা কিবরিয়া পুত্র। তিনি ঢাকা ধানমন্ডির বাসিন্দা বলে হলফমনামায় উল্লেখ করেন। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ডি.ফিল। তাঁর নামে বর্তমান ও অতীতে কোন মামলা নেই। হলফনামায় তিনি পেশা হিসেবে অর্থনীতিবিদ উল্লেখ করেন। তাঁর শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, পরামর্শক ইত্যাদি থেকে ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮০ টাকা আয় হয়। তাঁর নিজ নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা; বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে ১৭ লাখ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থানীয় আমানতে বিনিয়োগ ৪০ লাখ টাকা, গাড়ি অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ১০ লাখ টাকা, স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতু অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৫ লাখ ১০ হাজার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী অর্জনকালীন সময়ে মূল ২ লাখ টাকা, আসবাবপত্র অর্জনকালীন সময়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তাঁর অকৃষি জমি ঢাকা পূর্বাচলে দশ কাঠা রয়েছে। যার অর্জনকালীন মূল্য ৮ লাখ টাকা, ধানমন্ডিতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির বিনিময়ে ১৪টি ফ্যাট রয়েছে। ফ্যাটগুলো হস্তান্তর হয়নি। এছাড়া পৈতৃক সূত্রে গুলশানে একটি ফ্যাট রয়েছে। যার অর্জনকালীন মূল্য ৬০ লাখ টাকা। এ ফ্যাটটি তাঁর মরহুম পিতা শাহ এএমএস কিবরিয়া জীবদ্দশায় তাঁর নামে ক্রয় করেছিলেন। অপরদিকে, নবীগঞ্জে যৌথ মালিকানায় তাঁর দুই বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে তিনি পাবেন ৪৩ শতাংশ। এছাড়া যৌথ দুই করে কটেজ রয়েছে। এর ৯ শতাংশের মালিক তিনি। ড. রেজা কিবরিয়ার এইচএসবিসি ব্যাংকে ত্রিশ লখ টাকা এফডিআর এর বিপরীতে ওভারড্রাফট লোন রয়েছে ২০ লাখ ১০ হাজার ৫৩৫ টাকা।
বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়াঃ ২০১৪ সালের নির্বাচিত সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার আক্রমপুর গ্রামের বাসিন্দা মরহুম শেখ আব্দুল জব্বার ও মরহুমা শেখ আমেনা বিবির পুত্র। হলফনামায় তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেন জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারী এডুকেশন, যুক্তরাজ্য। বর্তমানে তার নামে কোন মামলা নেই। অতীতে হবিগঞ্জ প্রথম শ্রেণীর আমল আদালতে ছিল। এ মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তিনি পেশার বিবরণী হিসেবে উল্লেখ করেন শেখ ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ লিঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ক্যাটারিং ও রিয়েল এস্টেট, ৭/৯ গোল্ড স্ট্রিথ, নটিংহাম যুক্তরাজ্য। তার কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ টাকা, অন্যান্য খাত থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ৪৪ হাজার ৯৬২ টাকা। গাড়ি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্যসহ) ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার ২৯ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অংলকারাপ্রতিশ্রæতি দিয়েছেন এর মধ্যে রাস্তা নির্মাণের ৬০%, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণের প্রতিশ্রæতি ৬৫%, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণের ৪০% সামাজিক প্রতিশ্রæতি ৫০% বাস্তবায়ন করেছেন।
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীঃ তিনি আসনে হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স। পেশা রাজনীতি। কৃষিখাতে তাঁর বাৎসরিক আয় ৪০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক আয় ২ হাজার ৬২২ টাকা। চাকুরি থেকে পেয়েছেন ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৫ টাকা। তাঁর নিজের কাছে নগদ রয়েছে ৭৭ লাখ ৩ হাজার ৩৭৯ টাকা। আর স্বামীর নামে রয়েছে ৪ লাখ ২৪ হাজার ২৯৯ টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৪ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে নিজের নামে কিছু না থাকলেও স্বামীর নামে রয়েছে ৪২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তাঁর নিজের ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রোজ প্র্যাডো টিএক্স রয়েছে। স্বামীর রয়েছে ১২ লাখ টাকার যানবাহন। নিজের কাছে থাকা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্য জানা নেই তাঁর। তবে স্বামীর ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। নিজের কৃষি জমির মূল্যও তার জানা নেই। তবে স্বামীর কৃষি জমির মূল্য ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা। নিজের নামে থাকা অকৃষি জমির মূল্য ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং স্বামীর নামে থাকা অকৃষি জমির মূল্য ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবুঃ তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তিনি নবীগঞ্জে ‘জুহি ছিটঘর’র স্বত্ত¡াধিকারী। তাঁর বাৎসরিক আয় কৃষিখাতে ৪৫ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৬০ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে বছরে সম্মানী পেয়েছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সাথে অন্যান্য ভাতাদি পেয়েছেন ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৫০৮ টাকা। নিজের নামে তাঁর নগদ রয়েছে ১২ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫ লাখ টাকা। ৬০ লাখ টাকা মূল্যের একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রোজার রয়েছে তাঁরা। স্বর্ণ রয়েছে নিজের ৫ ভরি ও স্ত্রীর ১০ ভরি। ইলেষ্ট্রনিক্স সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে রঙিন টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল সেট। রয়েছে ৪০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজের নামে ৩ একর ও স্ত্রীর নামে ২.৩০ একর কৃষি জমি রয়েছে। অকৃষি জমি রয়েছে ২০ একর। ঢাকার পূর্বাচলে সরকারের দেয়া ৩ কাটার একটি প্লট রয়েছে তাঁর। এছাড়া ২টি দালানসহ ১২ শতকের পৈত্রিক বাড়ির ৭ ভাগের ১ ভাগ পান তিনি।
এদিকে, গত (২ ডিসেম্বর) রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন সকাল ১১টার দিকে হবিগঞ্জের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ এমপি প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। ঋণ খেলাপির অভিযোগে রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ডিভিশন এবং ঢাকা ব্যাংক থেকে পরিপ্রেরিত অভিযোগের ভিত্তিতে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
অপরদিকে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকার কারণে কেয়া চৌধুরী এমপি’র মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার। গত ২৮ নভেম্বর (বুধবার) গণফোরাম থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার সন্তান হেভিওয়েট প্রার্থী রেজা কিবরিয়া। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। উভয় প্রার্থীকে নিয়েই এলাকায় ছিল ব্যাপক আলোচনা। তবে নির্বাচনে মনোনয়নপত্রে বৈধতা পেতে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন রেজা কিবরিয়া।


     এই বিভাগের আরো খবর