,

ইংরেজি নববর্ষের ইতিবৃত্ত

সময় ডেস্ক ॥ সময় বহমান স্রোতের মতো। সময়কে কখনো বেঁধে রাখা যায় না। তাই একের পর এক পঞ্জিকার পাতা উলটে চলে যায় দিন, মাস, বছর, যুগের পর যুগ। কালের পরিক্রমায় এভাবেই দিনপঞ্জির পাতা উল্টাতে উল্টাতে দোরগোড়ায় হাজির হলো নতুন আরো একটি বছর। ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। শুভ ইংরেজি নববর্ষ! যেভাবে এসেছে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন: খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ থেকে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের সূচনা হয়েছে। আধুনিক গ্রেগরিয়ান ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ১লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নতুন বছর। মেসোপটেমিয় সভ্যতা (বর্তমান ইরাক) থেকে প্রথম নববর্ষ উদযাপনের সূচনা হয়। নিজস্ব গণনা বছরের প্রথম দিনে তারা নববর্ষ উদযাপন করতো।
তবে রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন- ইসরায়েল। দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। তবে ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ, বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অ-ইহুদি উৎস হতে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধি। আবার কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকেই গ্রহণ করেনি। যেমন, সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তান। এসব দেশ ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন: রীতি অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখে বাংলাদেশে নিউ ইয়ার উদযাপন করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর দিন পেরিয়ে শুণ্য ঘণ্টা থেকে শুরু হয় উৎসব। রাতের এ উৎসবকে বলা হয় ‘ থার্টি ফার্স্ট নাইট ‘।
তবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের তেমন প্রচলন নেই। গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও এ উৎসব উদযাপন হলেও তা খুবই নগণ্য। কিন্তু বড় শহর ও মফস্বলে এ উৎসবের জনপ্রিয়তা বেশ লক্ষণীয়।
নিউ ইয়ার ‘২০২০’ উদযাপনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি: বিভিন্ন দেশের মত আমাদের দেশ বাংলাদেশেও চলছে ইংরেজি নতুন বছর ২০২০ উদযাপনের প্রস্তুতি। চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। প্রতিবছর এদেশে নানারকম উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করা হয়। সাধারণ জনতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন সর্বক্ষেত্রেই নানা রঙয়ে নানা ঢঙয়ে পালিত হয় নিউ ইয়ার। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে একে অপরের সাথে বিনিময় চলে শুভেচ্ছাবার্তা। বিভিন্ন পণ্য ব্যবসায়ীরা এই দিন উপলক্ষে তাদের পণ্যে নানারকম আকর্ষণীয় ছাড় দিয়ে থাকেন ক্রেতাদের জন্য। আরো একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে থার্টিফার্স্টে শহরের বাড়ির ছাদ্গুলোতে ডিজে পার্টি, উদ্দাম নাচ-গান, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদির ধুম। তবে এবছর আগ্রহীদের এ আনন্দে জল ঢেলে দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ইংরেজী নববর্ষ থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) ডিএমপির সদর দফতরে বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষ্য ডিএমপির অপারেশন্স বিভাগ আয়োজিত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কোনও উন্মুক্ত স্থানে বা বাড়ির ছাদে কোনও সমাবেশ, গান-বাজনা করা কিংবা আতশবাজি ব্যবহার করা যাবে না। ৩০ ডিসেম্বর রাত থেকেই নগরীর সব ধরনের বার বন্ধ থাকবে। যেকোনও ধরনের ডিজে পার্টি নিষিদ্ধ থাকবে। অন্যদিকে থার্টিফার্স্ট নাইটে আইডি কার্ড ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। গাড়ি প্রবেশের ক্ষেত্রে ঢাবি’র স্টিকার থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আগের মতো শাহবাগ ও নীলক্ষেত এলাকা ব্যবহার করতে হবে”। সুতরাং, এবছর গতানুগতিকভাবে এদেশে নিউ ইয়ার উদযাপন হচ্ছে না বলেই আমরা ধরে নিতে পারি। তবে কি বন্ধ থাকবে আনন্দ উৎসব! হবে না উদযাপন! হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আনন্দ, হৈ-হুল্লোড় আর নতুন বছরে পুরনো সব কিছুকে বাদ দিতেই হবে এমন নয়? সুস্থ সংস্কৃতি আর সুন্দর পরিবেশে উদযাপন করুন আপনজনের সাথে। ভালোবাসা আর প্রীতিময় শুভেচ্ছো ছড়িয়ে দিন মানুষের জন্য। হাসি ফোটান দুঃখী মানুষের মুখে। নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে চলুন নতুন আরো একটি বছরের হাত ধরে। নতুন বছর কাটুক সবাইকে নিয়ে, সুস্থভাবে। দিনবদলের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও যেন হাঁটতে পারি অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে।


     এই বিভাগের আরো খবর