নুরুল আমীন পাঠান ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধে এক মাত্র শহীদ সান উল্লার নামে নামকরণকৃত সড়কটি সংস্কারের অভাবে অবহেলিত রয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্রজাতপুর গ্রামের সান উল্লা মেম্বার এক নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে ইনাতগঞ্জ এলাকার কিছু রাজাকার, আলবদর, আল-সামশ সান উল্লা মেম্বারকে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে এক দিন এক রাত তাদের জাহাজে আটকে রেখে টর্চারিং করে। পর দিন সকালে ইনাতগঞ্জের পার্শ্ববর্তী আলীপুর গ্রামের নিকটে একটি গাছের সাথে বেধে গুলি করে হত্যা করে। এলাকার মানুষ এখনো শহীদ সানউল্লা মেম্বারকে ভুলতে পারেননি। লোকজন আক্ষেপ করে বলেন, তিনি অত্যান্ত ভাল লোক ছিলেন। যার মধ্যে দেশ প্রেম ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সান উল্লার পরিবারকে আজও শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি। ২০১২ সালে তৎকালীন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম এর সার্বিক সহযোগিতায় এবং ইনাতগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দের সুপারিশের ভিত্তিতে উপজেলা সমন্বয় ও আইন শৃংখলা সভায় উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে ইনাতগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের নিকটের ব্রীজ থেকে লতিবপুর-লালাপুর-প্রজাতপুর ভায়া বুরহানপুর পর্যন্ত রাস্তাটি শহীদ সান উল্লার নামে নামকরণ করা হয়। নামকরণের দুই সপ্তাহ পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম এলাকাবীর উপস্থিতিতে সড়কটি আনুষ্টানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইনাতগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ জেহাদী, আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমানসহ এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এ সময় ইউএনও শামছুল ইসলাম বলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান। তাদের আত্বত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ একজন শহীদ এর নামে একটি রাস্তা নামকরণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকেও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। কিন্তু সড়কটি উদ্বোধনের পরই ওই রাতে শহীদ সান উল্লার নামের নেইম প্লেইট চুরি হয়ে যায়। কয়েক দফা চুরি হওয়ার পর সর্বশেষ ওই কুচক্রিমহল আলকাতরা দিয়ে নাম মুছে পেলে। এ ব্যাপারে শহীদ সান উল্লার সন্তান নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, সিলেটের ডাক ও চ্যানেল এস ইউকে টিভির প্রতিনিধি রাকিল হোসেন জানান, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর স্বীকৃতি স্বরুপ আমার শহীদ বাবার নামে একটি সড়কের নামকরণ হয়েছে। রাস্তা নামকরণের ফলে কিছুটা হলেও নিজেকে শান্তনা দিতে পেরেছিলাম। যে বা যারাই হিংসাত্বকমূলক মনোভাব নিয়ে এ কাজ করছেন তাদের জানা উচিত, একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের গৌরব। আর যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্বত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশ পেয়েছি। যুদ্ধে যারা স্বজন হারিয়েছেন, তারই কেবল বুঝেন ব্যাথা কত কষ্টের। তিনি সড়কটি রক্ষার স্বার্থে এলাকাবাসী সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
Leave a Reply