সময় ডেস্ক : কাঁকড়া হ্যাচারির শ্রমিকরা বেতন নিয়ে বিক্ষোভের পর এই প্রথম মুখ খুললেন সাকিব আল হাসান। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই সমস্যার। পরিবারসহ এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা সাকিব এ জন্য দুষছেন গণমাধ্যমকেও।
আজ ২২এপ্রিল (বুধবার) সকালে দেওয়া এই স্ট্যাটাসের অনুবাদ তুলে ধরা হলো-
‘বিগত কয়েক দিনে এগ্রো ফার্মে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমার বিলম্বিত বক্তব্যের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সকল তথ্য ঠিকমত যাচাই-বাছাই করে সত্যটা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি বলেই এই বিলম্ব। যদিও এগ্রো ফার্মের সাথে আমার নাম সরাসরি যুক্ত, আমার পেশাগত ব্যস্ততার কারণে আমার অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মতো এই কোম্পানিটিও অন্যান্য মালিক/অংশীদারদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়েই আমার জন্য ব্যবসার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড তদারকি বা সরাসরি অফিস পরিদর্শন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আপনারা সবাই জানেন, এ বছরের শুরু থেকে আমি আমেরিকায় অবস্থান করছি আমার পরিবারের সাথে, পরিবারের নতুন অতিথির আগমনের অপেক্ষায়।
এই সময়ের মধ্যে এগ্রো ফার্মের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা আমার জানা ছিল না এবং শ্রমিক অসন্তোষের ব্যাপারটি আমি মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পারি। অন্যান্য মালিকেরা এক্ষেত্রে আমাকে বিগত কয়েক মাসের সকল তথ্য যথাযথভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তারা আমাকে অবহিত করেছে, কিছু সংখ্যক কর্মচারী যারা কর্মরত ছিলো তাদের বেতন আগামী ৩০ এপ্রিল, ২০২০ তারিখের মধ্যেই দিয়ে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে উল্ল্যেখযোগ্য যে এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষেই প্রায় সব কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কর্মচারীরা হঠাৎ রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় ধারনা করা যায়, কারো গোপন ও কুপ্ররোচনাতেই এমনটি হয়েছে।
তবে, যখনই আমি বুঝতে পারি যে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তখনই আমি কোম্পানি এবং বাকি অংশীদারদের সাহায্য ছাড়াই আমার নিজের তহবিল থেকে তাৎক্ষনিক বকেয়া বেতন পরিশোধ করি। আমি বিশ্বাস করি এটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং এটা নিজেদের মধ্যেই রাখা উচিৎ ছিলো। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি এটা দেখে যে কর্মচারীরা মাসের শেষে বেতন নিতে সম্মতি জানিয়েও তারা আন্দোলনে অংশ নিলো!
অনেকের মত আমিও এই মহামারী মোকাবেলায় তহবিল সংগ্রহ করে আমার কর্মচারীদের মতই অন্যান্য অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি এটা বুঝে উঠতে পারছি না, মানুষ কেন ভাবছে আমি আমার কর্মচারীদের বঞ্চিত করবো যাদের আমি গত ৩ বছর ধরে বেতন দিয়ে আসছি।
আমি সত্যিই মর্মাহত যে মিডিয়া ব্যাপারটির সত্যতা যাচাই না করেই আংশিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছে। আংশিক মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক সংবেদনশীল শিরোনামগুলির চেয়ে তাদের সত্যতা যাচাই করে নেওয়াই উচিত ছিলো।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সত্য অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য মানুষকে জানানো মিডিয়ার বড় দায়িত্ব, তা না হলে অযথাই আমার মতো অনেক মানুষই এ ধরনের খবরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা শুধুমাত্র আমাকে দোষারোপ না করে পুরো ব্যাপারটি সকল অংশীদারের নামসহ সবার সামনে তুলে ধরতে পারতো। শুধু আমি না, কেউই এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাশা করে না। আশা করি মিডিয়া এবং সাংবাদিক ভাই-বোনেরা সংবাদ সকলের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আরো যত্নশীল হবেন।
জাতি হিসাবে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বর্তমান সংকটকে সামনে রেখে আমাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা প্রয়োজন এবং যেকোন ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য, গুজব এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সজাগ ও সোচ্চার হওয়া দরকার। আমি মনে করি এখন অন্যান্য যেসব অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে সেদিকেই আমাদের মনোযোগটা বেশি দেয়া উচিৎ। সবাই দয়া করে বাসায় থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।’
Leave a Reply